Friday, January 10, 2014

বাংলাদেশের নতুন সরকার অবৈধ



প্রধান বিরোধী দলসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গঠিত সরকার অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।

পত্রিকাটি শুক্রবার ‘ভারতের দায়িত্ব’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করেছে।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, একপাক্ষিক নির্বাচনে মাত্র ২২ শতাংশ ভোটে ক্ষমতাসীন সরকারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে নতুন সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ কিংবা সরাসরি অবৈধ ।

সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার বিষয়েও নয়াদিল্লির একটি স্পষ্ট অবস্থানে আসা দরকার। মূল বিরোধী দলের বয়কটে এবার বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতভাবেই একপাক্ষিক হয়েছে, মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে, ক্ষমতাসীন সরকারই কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় ক্ষমতার হাল ধরেছে। স্বভাবতই গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে নূতন সরকারের বৈধতা প্রশ্নযোগ্য কিংবা সরাসরি অবৈধ। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তাদের অনাস্থা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক নীতিতে আমূল অঙ্গীকারাবদ্ধ ভারতও স্বস্তিতে নেই।

আনন্দবাজার লিখেছে, ‘তবে গণতন্ত্রের নীতি অনুযায়ী অন্য একটি প্রশ্নও এ ক্ষেত্রে উঠে বইকী। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধী দলেরও কিছু ন্যূনতম দায়দায়িত্ব থাকিবার কথা। ক্রমাগত অনুরোধ-উপরোধ সত্ত্বেও রাজনৈতিক জেদ-বশত ভোট বয়কট করিয়া ভোটের প্রেক্ষিত রক্তাক্ত হিংসাদীর্ণ করিয়া তুলিবার অধিকারও গণতন্ত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারের বৈধতার প্রশ্নটি যেমন জরুরি, সরকার প্রতিষ্ঠা তথা গণতন্ত্র-পদ্ধতির প্রতি স্পষ্টত অসহযোগ দেখাইবার জন্য বিএনপি-জামাতের গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নটিও সমধিক জরুরি। শেখ হাসিনারও যেমন সরকার-চালনার জন্য আরও ‘বৈধ’ জনভিত্তি দরকার, বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ারও উচিত, প্রয়োজনীয় শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনের মতো গুরুতর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করা। বিশ্বের নিকট বাংলাদেশের সরকার-পক্ষ ও বিরোধী-পক্ষের এই পরস্পর-সংযুক্ত ‘দায়’-এর বিষয়টি তুলিয়া ধরিবার জন্য দরকার নয়াদিল্লিকে। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিও সমপ্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে ভারত একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।’

বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম সংকট উল্লেখ করে আনন্দবাজার লিখেছে, ‘এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম বৃহৎ সংকটটির নাম : বাংলাদেশ। ঢাকার নির্বাচন পরবর্তী ঘটনাক্রম দেখাইয়া দিতেছে যে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে হইতে যে লাগাতার রাজনৈতিক সংঘর্ষে সে দেশ আচ্ছন্ন ছিল, সেই সংঘর্ষ পরিস্থিতি আরও অনেক তীব্র হইয়াছে, একটি ভোট অনুষ্ঠান যেন রাতারাতি দেশটিকে দুই শিবিরে বিভক্ত করিয়া দিয়াছে। এক দিকে আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ, অন্যদিকে বিরোধী দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি পক্ষ।

মৌলবাদী, হিংসাপন্থী ইত্যাদি বিভাজনের অতি-সরলতায় যাইবার প্রয়োজন নাই, কেননা সকল সমাজগত ও ধর্মগত তকমা বাদ দিয়াই বলা যাইতে পারে, দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর এই বিভাজনের মধ্যে জমা হইয়াছে তুমুল বিস্ফোরক বারুদ। একদিকে যেমন সেই বারুদে জ্বলিতেছে বাংলাদেশের শহর-গ্রাম-জনপদ, প্রবল বিরোধিতার মধ্যেও ভোটদানের ‘স্পর্ধা’ দেখাইবার অপরাধে বহু মানুষের ঘরবাড়ি জমিজমা পুড়িতেছে, সঙ্গে সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও সেই বারুদ বিপুল বেগে আছড়াইয়া পড়িবার উপক্রম।’

সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘যেকোনো দাঙ্গা-পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের প্রচুর নাগরিক উদ্বাস্তু হইয়া সীমান্ত পারাইয়া ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেন, বর্তমান সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনা তো আরও বেশি, কেননা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলাচল আপাতত অতি-দুরূহতায় পর্যবসিত। তদুপরি একটি পক্ষ সর্বদাই অপর পক্ষটিকে ভারত-তোষণের অপবাদে অভিযুক্ত করিয়া থাকে, সুতরাং এই সম্ভাবনাও যথেষ্ট যে হিংসাবশত কিছু আক্রমণকারীও এই সুযোগে ভারতে প্রবেশ করিতে চাহিবে। যেহেতু আন্তর্জাতিক জঙ্গি ইসলামের সহিত বাংলাদেশের জামাতের সম্পর্ক স্পষ্ট এবং যেহেতু আন্তর্জাতিক জঙ্গি ইসলামের ভারত-বিদ্বেষও সর্বজ্ঞাত, বিষয়টি ভারতের পক্ষে অতীব সংবেদনশীল। স্বভাবতই ভারতীয় উদ্বেগ সদ্যনির্বাচিত বাংলাদেশের সরকারের কাছে জানাইয়াছেন নয়াদিল্লির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

http://www.sheershanews.com/2014/01/10/21379#sthash.dsrR8c1N.dpuf

No comments:

Post a Comment