Tuesday, January 7, 2014

চিকিত্সক সমাবেশে বক্তারা ; ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হলে আ’লীগ অস্তিত্ব হারাবে একঘরে হয়ে পড়েছে সরকার : কাল প্রেস ক্লাবে পেশাজীবীদের গণঅনশন

চিকিত্সক সমাবেশে রাজনীতিক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলীসহ পেশাজীবী নেতারা বলেছেন, দেশি-বিদেশি সব মহলকে উপেক্ষা করে প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ায় সারা বিশ্ব থেকে শেখ হাসিনার সরকার একঘরে হয়ে পড়েছে। এরপরও আগামী ৫ জানুয়ারি গায়ের জোরে সরকার ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন করতে চাইলে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান
শেখ হাসিনা চিরজীবনের জন্য অস্তিত্ব হারাবেন। 
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে চিকিত্সক সমাবেশে পেশাজীবী নেতারা এসব কথা বলেন। ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সুপ্রিমকোর্ট ও ঢাবি শিক্ষকদের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ এবং প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবিতে’ ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এ সমাবেশের আয়োজন করে।
ড্যাবের সহ-সভাপতি ডা. মো. শহিদুল আলমের সভাপতিত্বে চিকিত্সক এ সমাবেশে বক্তৃতা করেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাবির বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, ড্যাবের সহ-সভাপতি ডা. আবদুল কুদ্দুস, ডা. আবদুস সালাম, ডা. রফিক আল ফকির লাবু, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. বজলুল করিম ভুইয়া, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাক রহিম স্বপন, এ্যাব নেতা প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাবির অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ড্যাবের সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। 
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আর কিছু বাকি নেই। ইতিমধ্যে ১৫৩ জন ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে সরকার গঠনের কাজ হয়ে গেছে। বিরোধী দলের আন্দোলন ও দেশি-বিদেশি সব মহলকে উপেক্ষা করে ভোটারবিহীন প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ায় সারা বিশ্ব থেকে শেখ হাসিনার সরকার একঘরে হয়ে পড়েছে। বিশ্ববাসী এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার বিশ্বের কাছে আর মুখ দেখাতে পারছে না। আর এটাই ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের সফলতা। 
গণতন্ত্র ও অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন, তার হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর পতন অনিবার্য, তা না হলে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। ২৯ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাব, সুপ্রিমকোর্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ওপর সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু বেগম খালেদা জিয়া নন, সারা দেশই আজ অবরুদ্ধ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। তিনি বলেন, সরকার বিরোধী দলীয় নেতাকে মুক্ত না করলে জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করবে।
আগামী ৫ জানুয়ারির পর বর্তমান সরকার তাদের সকল বৈধতা হারাবে মন্তব্য করে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন কালো অধ্যায়ের সূচনা হবে। কারণ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বর্তমান সরকার হবে অবৈধ। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আপনাদের সকল মন্ত্রী-এমপিদের এ দেশের ১৬ কোটি মানুষ গণধোলাই দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করবে। তাই সময় থাকতে প্রহসনের নির্বাচন স্থগিত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
আমার দেশসহ বন্ধ গণমাধ্যম চালু, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবি করে তিনি আগামী ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন বন্ধের দাবিতে কাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে পেশাজীবীদের গণঅনশন কর্মসূচিতে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
শওকত মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা যদি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন স্থগিত করে সংলাপ ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন তাহলে তিনি রাজনৈতিকভাবে বেঁচেও যেতে পারেন এবং সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। অন্যথায় গায়ের জোরে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন করতে চাইলে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান শেখ হাসিনা চিরজীবনের জন্য অস্তিত্ব হারাবে। শেখ হাসিনার অস্তিত্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর থাকবে না।
আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, বিপন্ন গণতন্ত্র উদ্ধারে ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষকরা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে’ যোগ দিতে গেলে সরকারের পেটোয়া বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে। এটা ইতিহাসের বর্বরোচিত হামলা। রাজধানীতে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে না পারার ব্যর্থতায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, যে কোনো মূল্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে হবে। তা না হলে দেশের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
প্রেস ক্লাব, সুপ্রিমকোর্ট ও শিক্ষকদের ওপর সরকার দলীয়দের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানিয়ে সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, সুপ্রিমকোর্টে ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক ওই হামলার ঘটনায় দায়ীদের বিচারের জন্য প্রধান বিচারপতি সুয়োমুটো রুল না দিয়ে উল্টো আইনজীবীদের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য সভা ডেকেছেন। তিনি বলেন, সরকার একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ না করলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। সরকারের এ অপচেষ্টার ফল শুভ হবে না।

No comments:

Post a Comment