Wednesday, January 8, 2014

আমরা অবিলম্বে সংখ্যলঘুদের জান-মাল, উপসনালয় নিয়ে নোংরা রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-------- ডা. শফিকুর রহমান



আমরা অবিলম্বে সংখ্যলঘুদের জান-মাল, উপসনালয় নিয়ে নোংরা রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-------- ডা. শফিকুর রহমান

তারিখঃ ০৮-০১-২০১৪ ইং
সরকার কর্তৃক অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কমিশন গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ৮ জানুয়ারী নি¤েœাক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন ঃ-

“আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়ীঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তার দায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত যতগুলো ঘটনা ঘটেছে প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী দলীয় ক্যাডারদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে। অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক যে, কতিপয় প্রচার মাধ্যম ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছেন, আর বিনা তদন্তে সত্যতা যাচাই করা ছাড়াই জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের উপর দোষ চাপিয়ে কল্প কাহিনী রচনা করছেন। এতে প্রকৃত ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে, সন্ত্রাসীরা দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে অপকর্ম সংঘটিত করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নোংরা রাজনৈতিক খেলার শিকার হচ্ছেন।

অতি সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের উপর যে হামলা চলছে, তার সাথে ক্ষমতাসীন মহল সরাসরি জড়িত। তাদের এসব অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে শেষ করা যাবে না। নি¤েœ তার কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো ঃ

* নোয়াখালীর কৃষ্ণপুরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনায় স্থানীয় পুজা কমিটি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ১০ ক্যাডারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

* টাঙ্গাইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা হামলা করে। এর প্রতিকার চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশান দায়ের করা হয়। মহামান্য হাইকোর্ট ঘটনার জন্য দায়ী আওয়ামী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।

* পাবনার সাথিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও ভাংচুর করতে গিয়ে ধরা পড়ে যুবলীগের ক্যাডাররা।

* বগুড়া শহীদ মিনারে হামলা ও ভাংচুর করতে গিয়ে যুবলীগ নেতা হাতেনাতে ধরা পড়ে।

* ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি জাহাঙ্গির হোসেনের গ্রামের বাড়ীতে হামলা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের ৩ ক্যাডার হাতে নাতে ধরা পড়ে।

* ফেনীতে সেনাবাহিনীর গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করতে গিয়ে ধরা পড়ে ছাত্রলীগের কর্মী।

* ময়মনসিংহে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে শিব মুর্তি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যুবলীগের কর্মী।

* সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুদের বাড়ীঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে যুবলীগ কর্মী হাতে নাতে ধরা পড়ে। আদালত তাকে ১ বছর কারাদন্ড দেয়।

* মাগুরায় বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করতে গিয়ে যুবলীগের ৩ জন নেতা-কর্মী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।

* বগুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধরা পড়ে।

* যশোরের অভয়নগরে সংখ্যলঘুদের উপর সহিংসতা ঘটায় আওয়ামী লীগ। ৫ জানুয়ারীর ভোটার বিহীন নির্বাচনে বিজয়ী এমপি রনজিৎ কুমার রায় বলেছেন সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়েছে তার প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাবের ক্যাডাররা। অথচঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সৈয়দ আশরাফ ও শিক্ষামন্ত্রী এই ঘটনা জামায়াত শিবির ঘটিয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন এবং কতিপয় পত্রিকায় সরকারের এই বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে।

এ সরকারের আমলে রামুসহ কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর ও তাদের উপসনালয়ে হামলা চালায় যুবলীগ।

এ সরকারের আমলে বিশেষ করে প্রহসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের শন্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকার বেসামাল হয়ে, বেপরোয়াভাবে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে। এসব ঘটনার সাথে সরাসরি সরকার সম্পৃক্ত থাকায় কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী সরকারের মিথ্যা প্রচারণা ও নোংরা রাজনৈতিক খেলার নির্মম শিকার হচ্ছেন আমাদের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

আমরা ৭ জানুয়ারী সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিবৃতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলাসহ চলমান সহিংসতা, ভাংচুর ও জালাও, পোড়াওয়ের ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ এবং নিন্দা জ্ঞাপন করে ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি এবং এ ব্যাপারে জামায়াতের পক্ষ থেকে সকল ধরণের সহযোগীতারও আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমাদের এ বক্তব্য ৮ জানুয়ারী বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু সরকার তা অগ্রাহ্য করে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এসব ন্যাক্কার জনক ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটিয়ে যাচ্ছে। সরকার নিজেই যেখানে হিংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত করছে সেখানে জনগণ অসহায়।

এমতাবস্থায় প্রকৃত সত্য উৎঘাটন এবং সংখ্যালঘুসহ চলমান সহিংসতা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বন্ধ করার জন্য আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা জাতিসংঘের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ধরণের তদন্ত কমিশনকে বাংলাদেশের হিংসাত্মক কর্মকান্ডের বিস্তারিত তথ্য ও বিবরণ দিয়ে তদন্তকার্যে সহযোগীতার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।

আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় আবারো ঘোষণা করছি, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কোন সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এ তদন্তের মাধ্যমে পাওয়া গেলে আমরা দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনকে সব ধরণের সহযোগীতা করতে প্রস্তুত রয়েছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর, ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

আমরা অবিলম্বে সংখ্যলঘুদের জান-মাল, উপসনালয় নিয়ে নোংরা রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং সকল ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত মোকাবেলা করে এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের জনতার প্রতি এবং প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।

আশাকরি গঠনমূলক ও স্বাভাবিক নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় সর্বাগ্রে সরকার ও সকল রাজনৈতিক দল আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালাবেন।”

No comments:

Post a Comment