Thursday, January 16, 2014

বাংলাদেশ নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে তুমুল বিতর্ক : প্রশ্নবৃদ্ধ নির্বাচন সমালোচনায় সরকার



ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে বৃটিশ পার্লামেন্টে। প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী এই বিতর্কে অংশ নেন পার্লামেন্টের সকল দলের এমপিরা। সকাল সাড়ে ১১টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া পার্লামেন্টে দিনের প্রথম অধিবেশনেই স্থান পায় বাংলাদেশ ইস্যু। দুপুর দেড়টায় বির্তক শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় বেলা ২টা ১৮ মিনিটে। বাংলাদেশ নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে এতো দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্ক বৃটেনের ইতিহাসে এই প্রথম। পার্লামেন্টের ডেপুটি ¯িপকার লিনসে হয়েল এর সভাপতিত্বে শুরুতে বির্তকের সূচনা করেন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি এ্যান মেইন এমপি। এর পরেই একে একে বক্তব্যে অংশ নেন পার্লামেন্টে উপস্থিত বাকী সদস্যরা।
বৃটিশ এমপিরা তাদের বক্তব্যে বলেন , বাংলাদেশ বৃটেনের একটি অনত্যম গুরুত্বপূর্ন উন্নয়ন সহযোগী। বৃটেন থেকে প্রতিবছর ২ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ সহায়তা পায় বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল রাস্ট্র দেখতে চায় বৃটেন। বৃটিশ এমপিরা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ আজ দ্বিধা বিভক্ত। দেশে বর্তমানে যা ঘটছে তা কোনভাবেই গ্রহযোগ্য নয়। শেখ হাসিরার সরকার যেভাবে দেশ চালাচেছন তাতে দেশে বিরোধী দল আছে বলে মনে হচেছনা। এমন অবস্থায় আর্ন্তজাতিক মহলের দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে এমন অস্থিতিশীল অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বৃটিশ সরকারকে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বৃটিশ এমপিরা বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে নানা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বৃটিশ পার্লামেন্টের এমপিদের আলোচনায় উঠে আসে, দেশের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, বিরোধী দলের ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া, মানবাধিকার লঙ্গন ইস্যুসহ আইন শৃক্সখলা বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে মানুষ হত্যার মতো গুরুতর এসব অভিযোগগুলো। এছাড়াও আলোচনায় স্থান পাায় নিখোঁজ বিএনপির সাংগঠনিক স¤পাদক এম ইলিয়াস আলীসহ রাজনৈতিক নেতাদের গুমের ঘটনা ও জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি করার অধিকার নিয়ে।
পার্লামেন্ট আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে বৃটিশ ফরেন অফিস মিনিস্টার ডেভিড লিজিংটন, বাংলাদেশে পূনরায় একটি স্বচচছ ও নিরপেক্ষ নিবার্চন দাবী করে সরকারকে দ্রুত পদেক্ষপ নিতে আহবান জানান। সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসার পাশাপাশি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অবদানের প্রশংসা করেন লিজিংটন।
শ্যাডো ফরেন অফিস মিনিস্টার ক্যারি ম্যাকার্থি, বাংলাদেশ সরকারকে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাস অর্জন করা এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার তবে এটি কতটুকু স্বচছ ও নিরোপেক্ষ হচেছ তা দেখার অধিকার আছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিব পার্টির এমপি রিচার্ড ফুলার, লেবার পার্টির এমপি গ্যাবিন সুকার, কনজারভেটিব পার্টির এমপি নেইল পারিস, লেবার পার্টির প্রবীন নেতা জেরিমি করভিন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি জন হেমিং, জিম ফিজপ্রেট্রিক এমপি,বাঙালী এমপি রোশনারা আলী ও কনজারভেটিভ পার্টির এমপি বব বেকম্যান, রহমান চিশতী এমপি, নিক ডি ভয়েস এমপি, জনাথন আসরথ এমপি,
লিবডেম এমপি মার্টিন হরউডসহ বেশ কয়েকজন এমপি।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির রিচার্ড ফুলার বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো খুবই গুরুতর। বিরোধীদলহীণ প্রশ্নবৃদ্ধ জাতীয় নির্বাচন, বিনা বিচারের হত্যা ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্গিত হচেছ বাংলাদেশে। রেপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) বাংলাদেশের ৬০০ মানুুষকে এ পর্যন্ত হত্যা করেছে উল্লেখ করে সরকারদলীয় এই এমপি এক পর্যায়ে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুমের ইস্যুটিও উখতাপন করেন বৃটিশ পার্লামেন্টে। তিনি বিশ্বনাথ ভ্রমনের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের এমন একজন মেধাবী নেতা নিখোঁজ হওয়ার পরও সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। আর্ন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি হকের পদত্যাগ উল্লেখ করে, এই সংস্থাটির নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেন। বৃটেন সকল ধরনের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে কাদের মুল্লার মৃত্যুদন্ডকে ভূল সিদ্ধান্ত হিসেবে মন্তব্য করেন।
লেবার পার্টির প্রবীন নেতা জেরিমি করভিন, বাংলাদেশে মিডিয়ার উপর সরকারী দমন পীড়নের কথা উল্লেক করে বলেন, দেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরী। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে বলেন, একটি দেশে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন না হলে বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠে। তিনি সাথে সাথে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা আহবান জানান।
লেবার পার্টির এমপি গ্যাবিন সুকার বলেন, বাংলাদেশের দশম নির্বাচন যেভাবে স¤পন্ন হলো এটাকে কোন নির্বাচন বলা যাবেনা। যেখানে মাত্র ৪ থেকে ৫টি নির্বাচন পরিদর্শক ছাড়া জাতিসংঘ ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের কোন পরিদর্শক নির্বাচন পরিদর্শন করেনি। তাতে প্রতিয়মান হয় বাংলাদেশে কোন সুস্টু ও গ্রহন যোগ্য নির্বাচন হয়নি। তাই অবিলম্বে নতুন নির্বাচন জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পার্লামেন্টে বাঙালী এমপি রোশনারা আলী, বাংলাদেশে গত ফেব্র“য়ারী মাস থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতদের জন্য দু:খ প্রকাশ করে বলেন , আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ সব সময়ই চিন্তিত থাকেন দেশে ফেলে আসা তাদের স্বজনদের ব্যাপারে। তিনি বলেন, দেশে একটি স্বচছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বড়ো দলগুলো অতীতে ব্যর্থ হয়েছে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন স্বচছ হয়নি উল্লেক করে তিনি দেশের সহিংসতা বন্ধ এবং বিরোধী দলের গনতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধাঁ না দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান।
কনজারভেটিভ পার্টির এমপি বব বেকম্যান বলেন, জামায়াতে ইসলামির প্রসংঙ্গ টেনে বলেন, জামায়াত কোন সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিশ্বের কোন সংস্থা এখন পর্যন্ত চিহিত করতে পারেনি। দেশের বিগত নির্বাচনেও তারা অংশ নিয়ে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে পার্লামেন্টে। বাংলাদেশের ৪-৫% জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে এই সংগঠনটি। অথচ সরকার তাদেরকে ভোটের অধিকার হরন করেছে। তাদের নির্বাচনের বাহিরে রেখেছে। তিনি বলেন জামায়াত যদি বাংলাদেশের রাজনীতি করতে না পারে তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে। যা বাংলাদেশের সুস্থ রাজনীতির জন্য কোনভাবেই কল্যানকর হবেনা। তিনি এ সময় বাংলাদেশের তত্তবধায়ক সরকার জরুরী বলে উল্লেখ করেন।
কনজারভেটিভ পাটির এমপি নেইল পারিস বলেন, বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী দুজনই দুজনের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করেন। যা দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতে প্রভাব পড়ছে। এটা একটি দেশে গনতান্ত্রিক উত্তরনে কোনভাবেই কাম্য নয়

No comments:

Post a Comment