Wednesday, January 8, 2014

আবারো প্রমান হলো আওয়ামী লীগই সারা দেশে সাম্প্রদায়ীক বর্বর হামলা চালাচ্ছে!

আবারো প্রমান হলো আওয়ামী লীগই সারা দেশে সাম্প্রদায়ীক বর্বর হামলা চালাচ্ছে!
═════════════════════════════════════════
❑ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ায় যশোরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস হামলা চালিয়েছিল পরাজিত আওয়ামী লীগ নেতা!

◆ নির্বাচনের আগেই হুমকি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হুইপ ওহাবঃ
------------------------------------------------------------------------
নির্বাচনের আগেই যশোরের চাপাতলা মালোপাড়ার বাসিন্দাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন হুইপ অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব। নির্বাচনে নৌকার বাইরে বের হতে না পারলে পরিণাম ভাল হবে না বলে শাসিয়েছিলেন সংখ্যালঘুদের।
তিনি তাদের বলেছিলেন, "তিনি এখনও আওয়ামী লীগে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। দল তাকে বহিষ্কার করেনি। ফলে এবারের সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় সংখ্যালঘুরা যদি ভেবে থাকেন ওহাব আর আওয়ামী লীগে নেই, তার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে, তাহলে তারা ভুল করবেন। নৌকার প্রার্থী রণজিৎ রায় আপনাদের স্বজাতি হওয়ায় যদি ভাবেন তাকে ছাড়া আপনারা অন্য কাউকে ভোট দেবেন না তাহলে ভুল করবেন। ভোটের পরে এর জন্য আপনাদের খেসারত দিতে হবে। 
হিন্দু সমপ্রদায়ের নেতৃস্থানীয়দের উদ্দেশ্য করে হুইপ ওহাব বলেছিলেন, "আপনারা সামপ্রদায়িকতা থেকে বের হতে পারবেন না, আর আমার কাছে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা আশা করবেন- সেটা হবে না। আপনাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে ভোটের পরে আমি অসাম্প্রদায়িক থাকবো না সাম্প্রদায়িক আচার-আচরণ করবো। এদেশের জামায়াত-শিবির শুধু সাম্প্রদায়িকতা লালন করে সেটা ঠিক নয়, এদেশের সংখ্যালঘুরাও সাম্প্রদায়িক।"

নির্বাচনের ৫ দিন আগে চাপাতলার পাশেই সুন্দলী প্রাইমারি স্কুল মাঠে নির্বাচনী জনসভায় হুইপ শেখ আব্দুল ওহাব এসব কথা বলেছিলেন। ওই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন এমন অনেকেই এ কথা বলেছেন। নিজের বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে এই পাড়ার ৪/৫শ’ পরিবারকে ওহাব বুঝিয়ে দিলেন তার কথা না শোনার পরিণাম। গত ২রা জানুয়ারি নির্বাচনী প্রচারণায় বিদ্রোহী প্রার্থী জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব চাপাতলা গ্রামে যান। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি এক পর্যায়ে মালোপাড়ায় যান। তিনি এই পাড়ার মন্দিরের সামনের ফাঁকা জায়গায় নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করেন। কিন্তু সেই সভায় মালোপাড়ার বেশির ভাগ মানুষ ছিলেন অনুপস্থিত। ওহাবের নির্বাচনী কর্মীরা বহু চেষ্টা তদবির করেও তাদের সভায় হাজির করতে ব্যর্থ হন। 
ক্ষমতায় থেকে এই পাড়ার উন্নয়নে শেখ আব্দুল ওহাব অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন। মন্দির করে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন, ইটের রাস্তা করে দিয়েছেন। দিয়েছেন সরকারি বেসরকারি নানা অনুদান। এই পাড়ার মানুষের সঙ্গে তার বহু দিনের সম্পর্ক। কিন্তু শুধুমাত্র নৌকা প্রতীক না পাওয়ার কারণে সেদিনের সেই সভায় এই পাড়ার মানুষ উপস্থিত হননি। এতে ওহাব ক্ষুব্ধ হন। পাড়ার দুলাল বিশ্বাস, বিশ্বজিৎ সরকার, সমীর সরকারের মতো প্রবীণ ব্যক্তিরা ওহাবকে সাফ জানিয়ে দেন, তারা রণজিৎ রায়ের মার্কা নৌকার বাইরে ভোট দিতে পারবেন না। দীর্ঘ দিনের পরিচিত দুলাল, বিশ্বজিৎ আর সমীর সরকারদের তখন ওহাব বলেন, দেখ আমার কাজ আমি করেছি, এবার তোমাদের পালা। তোমরা যদি স্বজাতির টানে আমাকে বিমুখ করো তাহলে তার পরিণাম তোমরা ভোগ করবে, তখন আমার কিছুই করার থাকবে না। 
ঘটেছেও তাই। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন শেষ হতে না হতেই সে মূল্য দিতে হয়েছে এ পাড়ার মানুষদের। নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি মুছতে না পেরে তার বদলা নিয়েছে ওহাবের ক্যাডার বাহিনী। হামলাকারীরা সকলেই স্থানীয় এবং তাদের সবাই চেনে। হামলার শিকার অনেকে হামলার পর পরই তাদের নাম-পরিচয়ও বলেছে। 
এই পাড়ার বাসিন্দা সুকদেব কুমার বলেন, হামলাকারীদের বেশির ভাগই ওহাবের কর্মী-সমর্থক। হামলাকারীরা একযোগে মালোপাড়ার বিশ্বজিৎ, দুলাল, সমীর, দেবাংশু, সুকুমার, স্মরজিৎ, আশুতোষ, শান্ত, নিমাই, বিপ্লব, অরুণ, শংকর, শিমুল, সুমন, প্রবীর, কৃষ্ণ, অর্ধেন্দু, সাগর, সীমান্ত, প্রদীপসহ অনেকের শতাধিক বাড়িতে আক্রমণ শুরু করে। তারা বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি জিনিসপত্রে অগ্নিসংযোগ করে। ঘরের চাল, ডাল, ধান সব মিশিয়ে একাকার করে বাইরে ছুড়ে ফেলে। রান্নাঘরগুলোতে ঢুকে থালাবাটি, হাঁড়িপাতিল ভেঙে চুরমার করে। লেপ-তোষক থেকে শুরু করে ঘরের ভেতরের সব জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেলে। জেলে সম্প্রদায়ের এই পাড়ায় আগুনে পুড়েছে কয়েক লাখ টাকার জাল। হামলার শিকার হয়েছে কয়েক শ’ নারী-পুরুষ। হামলাকারীদের তাণ্ডবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পাশের ভৈরব নদ পেরিয়ে কয়েক শ’ নারী-পুরুষ ও শিশু ওই রাতেই আশ্রয় নেয় পাশের দেয়াপাড়া গ্রামে। তিন দফার এই হামলায় গোটা মালোপাড়া গ্রামটি লণ্ডভণ্ড হলেও স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের কোন সাহায্য না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই পাড়ার বাসিন্দারা। পঞ্চাশোর্ধ্ব বিষ্ণুপদ সরকার বলেন, যখন হামলাকারীরা গ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছে তখন আমরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ প্রশাসনকে বার বার খবর দিয়েছি। থানার ওসিকে ফোন করেছি। কিন্তু কারও কোন সাড়া পাইনি। যদি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি দলের নেতারা ঘটনাস্থলে আসতেন তবে পরিস্থিতি হয়তো এতটা খারাপ হতো না।
এদিকে এই হামলার ঘটনা নিয়ে রাজনীতির নোংরা খেলা হচ্ছে অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে কোন মামলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে দাবি করেন এই পাড়ার মাতব্বর দেবাংশু সরকার।
❑ ৩শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা: 

এদিকে এই হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে এলাকার ৩৯ জনের নাম-ঠিকানা উল্লেখসহ ৩শ’ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমদাদ হোসেন জানান, মামলায় যাদের নাম-ঠিকানা পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগ স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া, নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাবের বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থকেরও নাম রয়েছে ওই মামলার এজাহারে। ওসি বলেন- মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের আটকে পুলিশ কম্বিং অপারেশন চালাচ্ছে।
৫ জন আটক: পুলিশ বাদী মামলার এজাহারভুক্ত ৫ আসামিকে আটক করেছে অভয়নগর থানা পুলিশ। গতকাল বিশেষ অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাদিউজ্জামান, মোহাম্মদ আলী, চাপাতলা গ্রামের রবিউল, তরিকুল ও আবু সাঈদকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে রবিউল ও তরিকুল নির্বাচনে শেখ আব্দুল ওহাবের সক্রিয় নির্বাচনী কর্মী ছিল। 


❑ ১৮ দলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ:
---------------------------------------
অভয়নগরে হিন্দু সমপ্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় পুলিশ ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের দায়ী করায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। গতকাল দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, অভয়নগরে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য রণজিৎ রায় নিজে বলেছেন, এ হামলার জন্য তার প্রতিপক্ষ বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাবের প্ররোচনা ও তার কর্মী-সমর্থকদের দ্বারা এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হয়ে হুইপ শেখ আব্দুল ওহাবের লোকজনই এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। সবকিছু জানার পরও পুলিশ এ ঘটনায় ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের জড়িত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করছে। তিনি এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রকৃত হামলাকারীদের আটক ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। একই সঙ্গে এই ঘটনাকে যারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ১৮ দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য মিডিয়া কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

❑ অভয়নগরে জামায়াত নেতার বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট:
-------------------------------------------------------------
নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে যশোরের অভয়নগর উপজেলার জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজসহ বিএনপি নেতা ও সমর্থকদের বাড়িঘরে মঙ্গলবার ভোর রাতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। যৌথবাহিনীর উপস্থিতিতে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসীরা এ হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন। এসময় সন্ত্রাসীরা ঘরে থাকা পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফের বেশ কয়েকটি খণ্ড তছনছ করে। লণ্ডভণ্ড করে দেয় বাড়ির সকল আসবাবপত্র। এসব অভিযানের সময় জামায়াত, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের বাড়িতে না পেয়ে ঘরবাড়ি ও ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটানো হয়। এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গতকাল ভোর রাতে যৌথবাহিনী বালিয়াডাঙ্গা ও চাপাতলা গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় তাদের সঙ্গে ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু সশস্ত্র নেতাকর্মী। অভিযানের সময় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি না পেয়ে যৌথবাহিনী ফিরে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের সশস্ত্রকর্মীরা ফেরেনি। তারা ওই সব বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র লুটপাট, ভাঙচুর ও তছনছ করে। এ সময় উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা এখান থেকে ৫টি সিলিং ফ্যান, একটি ল্যাপটপ, একটি ডেক্সটপ কম্পিউটারের সিপিইউ, একটি ফ্রিজ, স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসময় জামায়াতের আমীর মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ ও তার ছেলে থানা শিবিরের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বাড়িতে ছিলেন না। এছাড়া একই সময় ওই গ্রামের ডা. সোহরাব হোসেন, আয়ুব আলী, চাপাতলা মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা ইউসুফ আলী, বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া, মিজানুর রহমান, জামায়াত নেতা ও ইউপি সদস্য আবুল কাশেম মোল্যাসহ ১০-১২টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ভাঙচুর, লুটপাট ও অভিযানের সময় পুরুষশূন্য ওই এলাকায় মহিলারা চরম আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘর ফেলে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নেয়।

❑ এ বিষয়ে হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব বলেন, যারা এই ধরনের কথা প্রচার করছে তারা নিজেদের অতীত ভুলে গেছে। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবে। আজ যারা আমাকে ভোট দেয়নি, আগামীতে যে তারা অন্যকে ভোট দেবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া কারা কিভাবে এই হামলা চালিয়েছে তা আমার জানা নেই। তিনি এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে আটকের দাবি জানান।
এদিকে চাপাতলার মালোপাড়ায় সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে স্থানীয় নবনির্বাচিত এমপি রনজিত রায় বলেন, "যারা নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে পারেনি তারাই এ হামলার পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছে। তারা তাদের পোষ্য গুণ্ডাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে মালোপাড়ার কয়েকশ’ জেলে পরিবারের উপর যে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছে তা বর্ণনাতীত।"

No comments:

Post a Comment